২০১৯ এ আমি কাজ করতাম দেশের একটি অন্যতম টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, এডিএন টেলিকমে। পজিশন ছিলো, সিনিওর ইঞ্জিনিয়ার (মাইক্রোসফট প্রোডাক্ট গ্রুপ)। কাজের খাতিরে সারাদিনই কাস্টমার ভিজিটে যেতে হয় আমাকে। একবার গেলাম দেশের একটি বড় পোশাক তৈরীর কারখানায়। সাভারে অবস্থিত সেই কারখানার আইটি টিমের সাথে বসলাম অফিস ৩৬৫ নিয়ে কথা বলতে।
কথার এক পর্যায়ে যখন প্রাইজিং নিয়ে কথা বলছি, তখন এক ভদ্রলোক আমাদের জানালেন, তারা কোনো একটি কোম্পানি থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে লাইফটাইমের জন্য অফিস ৩৬৫ কিনেছেন, তাও আবার ৭০ টি লাইসেন্স। বিকাশে তারা ৫০০০ টাকাও দিয়ে দিয়েছেন। আকাশ থেকে পড়ে আমার দিল চুরমার হয়ে যাওয়ার পর আমি উনাকে জানালাম আমিও ১০টি লাইসেন্স নিবো। আমার সাথে অই কোম্পানির পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। এ বলে চলে আসলাম। সপ্তাহখানেক পর অই আইটি টীম ফোন দিয়ে বললেন, বিকাশ করা নাম্বার বন্ধ। কোনোভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ওদের সাথে। ৫০০০ টাকা নাম লিখলো লসের খাতায়।
আজ সকালে আমার এক প্রাইমেরি স্কুল ফ্রেন্ড ফোন দিলো আমাকে। বন্ধু একটি অফিস ২০১৯ প্রফেশনাল প্লাস কিনেছিলো মাসখানেক আগে, ফেইসবুকের একটি পেইজ থেকে, তাও আবার ৩৫০ টাকায়। গত পরশু থেকে তার অফিস কাজ করছে না। বার বার এক্টিভেট করতে বলা হচ্ছে। গতকাল সে মাইক্রোসফট সাপোর্টে একটি সাপোর্ট টিকেট তৈরী করে। মাইক্রোসফট সাপোর্ট টীম কনফার্ম করেছে পাইরেটেড অফিস ভার্সনে মাইক্রোসফট কোনো সাপোর্ট দিতে পারবেন না। অনেকবার অই ফেইসবুক পেইজে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
উইন্ডোজ এবং অফিস হলো মাইক্রোসফট এর কোর প্রোডাক্ট। মাইক্রোসফট এর অর্ধেকেরও বেশি লাভ আসে এই ২টি প্রোডাক্ট থেকে। আসুন একবার দেখি এই দুইটি প্রোডাক্টের অফিসিয়াল এবং লোকাল প্রাইজঃ
১। যদি কেউ বাংলাদেশ থেকে উইন্ডোজ ১০ প্রো মাইক্রোসফট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে কিনতে চায়, তাহলে তাকে গুনতে হবে ২২,৯৯৯ টাকা, সাথে ভ্যাট/ট্যাক্স। ভেরিফাইড লিংকঃ
https://www.microsoft.com/en-bd/d/windows-10-pro/df77x4d43rkt/48dn?rtc=1&activetab=pivot:overviewtab
২। যদি কেউ বাংলাদেশের অফিসিয়াল মাইক্রোসফট পার্টনার (স্মার্ট টেকনোলোজি, রায়ানস, গ্লোবাল ব্র্যান্ড বা অন্যান্য) থেকে উইন্ডোজ ১০ কিনতে চায়, তাহলে দিতে হবে ১৪,০০০ টাকা। ভেরিফাইড লিংকঃ https://www.smartbd.com/microsoft-windows-10-pro-64-bit-dvd-oem-fqc-08929
৩। অফিস ২০২১ প্রফেশনাল প্লাস যদি কেউ বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মাইক্রোসফটের কাছ থেকে কিনতে চায়, তাহলে দাম আসে ৫৩,৯৯৯ টাকা। ভেরিফাইড লিংকঃ https://www.microsoft.com/en-bd/microsoft-365/p/office-professional-2021/cfq7ttc0hhj9
৪। আর পার্টনার থেকে Office Pro Plus 2019 কিনতে চাইলে দাম আসে ৫৭,৫০০ টাকা।
তাহলে প্রশ্ন আসে, কত পার্সেন্ট ডিস্কাউন্ট দিলে ৫৭০০০ টাকার প্রোডাক্ট ৩৫০ টাকায় পাওয়া যায়। বাঙ্গালীর সস্তা জিনিস খুব পছন্দ। ডিস্কাউন্টের ভেলকিতে যে প্রাইভেসির কত বড় ক্ষতি হচ্ছে তা কখনোই আমরা বুঝি না।
কিছু ফেইসবুক পেইজের নাম বলি, যা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে ঠকিয়ে যাচ্ছেঃ
- Parallex Soft Touch (19771 Likes)
- Bright Source (126 Likes)
- ST Gadgets (538 Likes)
- OfferUp Shop (126 Likes)
- Find Me (921 Likes)
- এরা খুব সুন্দরভাবে মানুষকে চুনা লাগায়। প্রতিটা পোষ্টের উপরে লেখাঃ We have 100% authentic products with supports. You can safely shop with us. তাই মানুষ তাদের সরলমনে বিশ্বাস করে, আর তারা মীরজাফরের মত বেঈমানী করে।
- আল্লাহর দেওয়া ৩৬৫ দিনের প্রতিদিন তাদের মেগা সেল আর ডিস্কাউন্ট চলে। যেন আলাদিনের চেরাগ তাদের অফিসেই আছে।
- তাদের ফিজিক্যাল কোনো অফিস নেই। নেই কোনো ফোন নাম্বার। আছে শুধুমাত্র একটা ফেইসবুক পেইজ।
- প্রতিটা বিকাশ আর নগদ নাম্বার হলো এজেন্ট নাম্বার। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের দোকাদের নাম্বার দিয়ে তারা টাকা নেয় কাস্টমারের কাছ থেকে।
- প্রতিটা পোষ্ট হলো স্প্যাম এর কারখানা। স্প্যাম ফিল্টারে ফেলা হলে সবগুলা পোষ্ট ব্লক খাবে।
কেউ একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন একদিন, ২০০ টাকা দিয়ে কিনে নাকি উনি প্রায় ১ বছর উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করছেন। বাকবিতর্কে উনি বলেছেন, মাইক্রোসফট ই নাকি এইগুলো মার্কেটে ছাড়ে ব্যবসা করার জন্য।
যাদের মনে একই প্রশ্ন আছে, তাদের জন্য বলছিঃ
আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন অনেকগুলো সিডি-ডিভিডির কোম্পানি ছিলো দেশে। তার মধ্যে আইটি নেক্সট ছিলো বিশাল বড় প্ল্যাটফর্ম। সকল গেইমস আর সফটওয়্যার এর ডিভিডি প্রায় আইটি নেক্সট থেকে মার্কেটে আসতো। আমরা তখন উইন্ডোজ এক্সপি আর উইন্ডোজ ৭ কিনতাম আর ডিভিডির কভারের পেছনে আমরা একটা কমন সিরিয়াল কী পেতাম, যা দিয়ে আমরা সবাই উইন্ডোজ একটিভ করতে পারতাম। ৫০ টাকার সিডিতে উইন্ডোজ একটিভ করার এই মানে না যে আমরা জেনুইন সফটওয়্যার ব্যবহার করছি। এইটা একটা পাইরেটেড সফটওয়্যার, এবং Key Management Service (KMS) টুলস দিয়ে একটা সিরিয়াল কী জেনারেট করে তা উইন্ডোজ এর ফাইল করাপ্ট করে ইঞ্জেক্ট করা হয়। তাই আমরা উইন্ডোজ কে এক্টিভেট দেখতে পাই।
এমনও রেকর্ড আছে আমাদের কাছে, যে মাত্র ৯৯ টাকা দিয়ে 1TB ওয়ানড্রাইভ কিনেছেন। উনার ব্যক্তিগত ফাইল এবং ছবি আপলোড করার কিছুদিন পর উনি আর এক্সেস করতে পারছেন না।
কোনো সাবস্ক্রিপশন কেনার আগে অবশ্যই মার্কেটের জায়ান্ট অর্গানাইজেশনগুলো থেকে যাচায় করে নিবেন। না হলে ইভ্যালীর মত ভেলকিও খেতে পারেন 😊
মাইক্রোসফট এর কোনো প্রোডাক্ট নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা থাকলে, আমাকে ইমেইল করতে পারেনঃ
Rezwanur Rahman
Senior Technical Lead, Microsoft 365 Global Operations.
Microsoft Corp.
Email: rezwanur.rahman@msftcommunity.com